ভালোবাসা, হারানো, এবং হৃদয়ের সীমানা ছোঁয়া এক গল্প।

যেদিন রাতারাতি উপমহাদেশ ভাগ হয়ে গিয়েছিল, সেদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিটেছাড়া হয়ে গিয়েছিল তাদের ঘরবাড়ি থেকে—পরিবারগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল, আর জীবনের মানচিত্রে তৈরি হয়েছিল গভীর বিভাজনের রেখা। তারা একই ভাষা বলত, একই খাবার ভাগ করত, একই আবেগে বাঁচত—তবু একদিনে একে অপরের কাছে অচেনা হয়ে পড়েছিল।

দামোদর এইসব কাহিনি শুনে বড় হয়েছে তার অন্ধ ঠাকুরদার মুখে—বিভাজন, নির্বাসন আর হারানোর বেদনাময় গল্প। কিন্তু সেসব গল্প একদিন বাস্তব হয়ে ওঠে, যখন ঘটনাচক্রে তার দেখা হয় পদ্মা-র সঙ্গে—সীমান্তের ওপার থেকে আসা এক তরুণী, যার জীবন বিভাজনের সেই দাগে চিরকাল দগ্ধ। কলকাতার নিষিদ্ধ পল্লীতে, এক অবৈধ অনুপ্রবেশকারিণী, পদ্মা, খুঁজতে এসেছে তার হারিয়ে যাওয়া মাকে—অজান্তেই ঢুকে পড়েছে শহরের অন্ধকার জটিল ভূগোলের ভেতর।

প্রথম সাক্ষাৎ থেকেই দামোদর বুঝতে পারে—পদ্মা অন্যরকম। তার জীবনের গল্প, তার লড়াই, তার বেঁচে থাকার ইতিহাস—সবকিছু মিলিয়ে দামোদরের কাছে খুলে যায় এমন এক জগৎ, যা সে শুধু কাহিনির মতো শুনেছিল। ভীত-সন্ত্রস্ত এক অনুপ্রবেশকারিণীর প্রতি সহানুভূতি ধীরে ধীরে পরিণত হয় এক নিঃশব্দ বন্ধনে—যে বন্ধন পেরিয়ে যায় দেশ, ধর্ম আর সীমানার প্রাচীর।


যদিও দামোদর চেয়েছিল পদ্মাকে এই দেশেই রেখে দিতে, শেষ পর্যন্ত সে সম্মান জানায় পদ্মার অদম্য সিদ্ধান্তকে—নিজের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাকে। তাদের যাত্রা শুরু হয়—এক আশ্চর্য, অন্তরস্পর্শী যাত্রা। অসংখ্য বাধা পেরিয়ে তারা পৌঁছে যায় ইছামতী নদীর তীরে। আর কয়েক পা এগোলেই পদ্মা পৌঁছে যাবে নিজের দেশে—নিজের মাটিতে, যেখানে এখন সে এক সংখ্যালঘু। দামোদরও সংখ্যালঘু—তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অর্থে।



Post a Comment

Previous Post Next Post