“বিষাক্ত মানুষ”: বাংলা সিনেমায় অন্ধকারের সাহসী যাত্রা! যৌনতার নয়, মানুষের মানসিক অস্থিরতার গল্প।

২৮ আগস্ট মুক্তি পাচ্ছে এক সাহসী কাহিনি, যা দর্শককে চমকে দেবে।বাংলা সিনেমায় সচরাচর যে ধরণের সাহসী বিষয়বস্তু দেখা যায় না, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তৈরি হয়েছে বিষাক্ত মানুষ। এই ছবির কিছু মূল চরিত্র ও নির্মাতা একে একে জানিয়েছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা।


পরিচালক সুর্য (সানি) রায় - সুর্য রায়ের কাছে এই ছবির শুটিং ছিল একেবারেই অন্যরকম। মানসিক ও শারীরিকভাবে তাঁকে সীমার প্রান্তে ঠেলে দিয়েছিল কাজটি। তাঁর কথায়, “এটি ছিল একটি অযৌন চলচ্চিত্র, যা তৈরি হয়েছে একেবারে যৌনতা–কেন্দ্রিক এক বিকৃতির প্রেক্ষাপটে। আমাদের লক্ষ্য ছিল মানসিক অস্থিরতাকে তুলে ধরা, যৌনতাকে নয়।”

চিত্রনাট্যকার সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে গল্প শুনেই তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন—এটি বানাতেই হবে। সুর্যের মতে, নেক্রোফিলিয়ার মতো বিকৃতি নতুন নয়, বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তা সমাজে বিদ্যমান। তাঁর বিশেষ জোর ছিল অভিনেতাদের প্রতি, যাঁরা নিজেদের সম্পূর্ণ সমর্পণ করেছিলেন চরিত্রে। অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শুটিং নিয়েও তিনি সচেতন ছিলেন: “যৌনতা ব্যক্তিগত বিষয়। তাই অভিনয়ে আমি চাইছিলাম সংযম, অতিরঞ্জিত কিছু নয়।”

অভিনেত্রী অনংশা বিশ্বাস - অনংশা বিশ্বাসের কাছে এই  ছবিতে কাজ করা ছিল মানসিক পরিশোধনের মতো। ব্যক্তিগত জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তাঁকে চরিত্রে ঢুকতে সাহায্য করেছিল। মুম্বইয়ে এক স্টকারের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি, যা তাঁকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে।তিনি বলেন, “আমার কাছে ভালো বা খারাপ গল্পই আসল, অন্ধকার বা আলো নয়। ‘শিরো’র চরিত্রের প্রেক্ষাপট আকর্ষণীয়ভাবে বলা হয়েছে। আমার কাছে ভালোবাসা মানে ভালোবাসা, অন্তরঙ্গতা মানে অন্তরঙ্গতা—এখানে লিঙ্গ বা অভিমুখের কোনো গুরুত্ব নেই।”

পরিচালক সুর্য রায়ের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ছিল দারুণ। সৌরভ দাস, রূপসা চ্যাটার্জি ও অন্য সহশিল্পীদের প্রশংসা করেছেন তিনি। Klikk প্ল্যাটফর্মকেও তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ছবিটি দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

অভিনেতা যুধাজিৎ সরকার (‘তীর্থ তালুকদার’) - পুলিশ তদন্তকারীর চরিত্রে যুধাজিৎ সরকারের অভিজ্ঞতা ছিল আলাদা। চরিত্রটির অদ্ভুত অভ্যাস—যেমন সানস্ক্রিন–আসক্তি—থেকে শুরু করে কথা বলার ধরণ পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই গভীর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি।Klikk প্ল্যাটফর্মকে তিনি নিজের বাড়ির মতো মনে করেন। সহশিল্পীদের নিয়ে উচ্ছ্বসিত যুধাজিৎ বিশেষ করে সৌরভ দাসকে আখ্যা দিয়েছেন “এনার্জির আগুনগোলা” হিসেবে। সুমনা দাস, অনংশা বিশ্বাস, শুভম, বিমল, রানা, রূপসা চ্যাটার্জি—সবার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে তিনি উপভোগ করেছেন।

অভিনেত্রী সুমনা দাস (‘রাজিয়া’) - সুমনা দাসের কাছে এটি ছিল একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। এর আগে এ ধরণের সাইকোটিক চরিত্রের প্রেক্ষিতে তিনি কখনও কাজ করেননি। প্রথমে একটু সংশয়ে ছিলেন, তবে পরিচালক সুর্য রায়ের সাহায্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে পান।সবচেয়ে কঠিন দিন ছিল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের শুটিং, যখন তিনি ১০২ ডিগ্রি জ্বর আর প্রচণ্ড পিঠের ব্যথা নিয়েও ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সহশিল্পী ও টিমের সমর্থন তাঁকে সেই দিনটি সফলভাবে শেষ করতে সাহায্য করেছিল।

অভিনেতা রানা বসু ঠাকুর – (‘আবদুল’) - প্রথমবারের মতো তাঁকে দেখা যাবে এক বয়স্ক মুসলিম মধ্যবিত্ত পিতার চরিত্রে। অভিনেতা রানা বসু ঠাকুর নিজেই স্বীকার করলেন—এমন চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ এর আগে কখনও পাননি। তাই তিনি কৃতজ্ঞ পরিচালক সুর্য রায়ের কাছে, যিনি তাঁকে এত আলাদা এক ছাঁচে তাঁকে ভাবতে পেরেছেন।রানা বসু ঠাকুরের মতে, ছবির কলাকুশলীরা ছিলেন অসাধারণ। সহশিল্পীরা যেমন নিষ্ঠাবান, তেমনই প্রাণবন্ত। পরিচালক সুর্য রায়কে তিনি বর্ণনা করেছেন সমসাময়িক প্রজন্মের অন্যতম তীক্ষ্ণ মনের নির্মাতা হিসেবে। তাঁর বিশ্বাস, “দর্শকরা পর্দায় এক অনবদ্য, কঠিন অথচ চিত্তাকর্ষক কাহিনির উন্মোচন দেখতে পাবেন।”

বিষাক্ত মানুষ Klikk এ মুক্তি পাচ্ছে ২৮ আগস্ট, ২০২৫-এ। এটি একটি থ্রিলার ধর্মী ডার্ক স্যাটায়ার, যা বাংলা সিনেমায় সচরাচর দেখা যায় না। পরিচালক ও শিল্পীদের বিশ্বাস, ছবিটি দর্শকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post